সঠিকভাবে হিসাব রাখলে কি কি মারাত্মক ঝুঁকি বিপদ থেকে আপনার ব্যাবসায় রক্ষা পেতে পারে?

একজন ব্যাবসায়ী বা উদ্যোক্তা হিসেবে আপনার মনে হতে পারে হিসাব আর এমন কি? রাখলে রাখলাম না রাখলে নাই, তাই না? অনেকেই এমনটা মনে করে এবং শেষে বড়সড় ধরা খায়।  যখন বুঝতে পারে এভাবে ভাবাটা ভীষণ বোকামি হয়ে গেছে তখন আর কিছু করার থাকে না।

আসুন তবে জেনে নেয়া যাক হিসাব রক্ষন সঠিকভাবে করলে তা কিভাবে আমাদের  নানা রকম ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে আগাম জানান দিয়ে ব্যাবসায়কে বাচিয়ে দিতে পারে।

. আর্থিক ক্ষতি হবার ঝুঁকি

বিপদঃ

আপনি যদি না জানেন কোথায় কত খরচ হচ্ছে, তাহলে খরচের নিয়ন্ত্রণ হারাতে পারেন।

উদাহরণ:

মনে করুন, আপনি একটি কাপড়ের দোকান চালান। দেখা গেল প্রতি মাসে আপ্যায়ন খাতে আপনার ম্যালা টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে চাইলেই যা নিয়ন্ত্রণ করা যেত। অথবা কোন মাসে ইনটারনেট বিল বা ময়লা বিল বা নানা রকম সার্ভিস চার্জ খেয়াল না করায় দুবার করে দেয়া হয়ে গেছে। ফলে আপনার বেশ বড় একটা টাকা শুধু শুধু বেরিয়ে গেছে যা আপন চাইলেই এড়াতে পারতেন।

হিসাব রাখলে কীভাবে রক্ষা পাওয়া যেত:

প্রতিদিন সকল খরচের হিসাব ভাউচার হয়ে লেজারে উঠে যেত ও কোন খরচ দুইবার হলে সেটা ধরা পড়ত। তাছাড়া মাসের শেষে যখন ফাইলান একাউন্টস ক্লোজ করতেন তখন দেখা যেত সেখানে দুইবার খরচ উঠে গেছে বা আগের মাসের সাপেক্ষ্যে কত বেশি খরচ হয়ে গেছে।

ফলঃ আপনার অপ্রয়োজনীয় টাকা খরচ হওয়া থেকে বেচে যেত এবং অসাধু কর্মচারী চিনতে পারতেন।

 

. চুরি বা প্রতারণার ঝুঁকি

বিপদ:

কর্মচারী যদি প্রতিদিন বিক্রির টাকা থেকে কিছু রেখে দেয়, আপনি না জানলে টের পাবেন না।

উদাহরণ:

আপনার দোকানের এক কর্মচারী প্রতিদিন বিক্রির টাকা থেকে ৫০০ টাকা নিজের পকেটে রাখছে। আপনি হিসাব না রাখায় এটি কয়েক মাস পরও ধরা পড়ছে না।

হিসাব রাখলে কীভাবে রক্ষা পাওয়া যেত:

দৈনিক বিক্রির খাতা, স্টক আউট হিসাব এবং ক্যাশ ইনফ্লো মিলিয়ে দেখলে সহজেই বুঝতে পারতেন ঘাটতি কোথায় হচ্ছে।

ফলঃ অসাধু কর্মচারীকে চিনতে পারতেন এবং কিভাবে এটা থেকে বাচা যায় তার জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যাবস্থা নিতে পারতেন।

 

. কর (Tax) সংক্রান্ত বিপদে পড়ার ঝুঁকি

বিপদ:

আয় বা ব্যয়ের সঠিক হিসাব না থাকলে আয়কর বা ভ্যাট দাখিল করতে ভুল হতে পারে। এতে জরিমানা বা মামলা হতে পারে।

উদাহরণ:

একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কর অফিসে আয় কম দেখিয়ে ফাইল করলেন। পরে অডিটে ধরা পড়ে যে তিনি আরো আয় গোপন করেছেন।

হিসাব রাখলে কীভাবে রক্ষা পাওয়া যেত:

মাসিক আয়ের রিপোর্ট ও ব্যয়ের রসিদ রাখলে আয়কর ফাইলে সবকিছু সঠিকভাবে দেখানো যেত। ফলে আইনি ঝুঁকি থাকত না।

 

. নগদ টাকার সংকট (Cash Flow Crisis)

বিপদ:

নগদ টাকার অভাবে আশু সেলস মৌসুমে যথেষ্ট পরিমান মালামাল কিনতে পারছেন না।

উদাহরণ:

আপনার দোকানে উৎসবের সময় প্রচুর বিক্রির সম্ভাবনা, কিন্তু আপনার সব টাকা আগেই অপ্রয়োজনীয় মাল কিনতে খরচ হয়ে গেছে। এখন স্টক আনার জন্য পুঁজি নেই।

হিসাব রাখলে কীভাবে রক্ষা পাওয়া যেত:

মাসিক বাজেট ও ক্যাশ ফ্লো ট্র্যাক করলে আপনি বুঝতে পারতেন কখন কত টাকা জমা রাখতে হবে, এবং অপ্রয়োজনীয় মাল না কিনে টাকা ধরে রাখতেন। তাছাড়া স্টক লেজার মেন্টেন করলেও বুঝা যেত কোন মাল বেশি হয়ে গেছে, আর কেনার দরকার নেই।

 

. ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার ঝুঁকি

বিপদ:

হিসাব না থাকায় আপনি বুঝতে পারেন না কোন পণ্য বা সার্ভিস লাভজনক, ফলে ভুল পণ্যে বা কম মুনাফা আয়কারী পণ্যে বিনিয়োগ করেন।

উদাহরণ:

আপনি ধরলেন যে টি-শার্টে বেশি লাভ হচ্ছে, তাই বড় করে অর্ডার দিলেন। পরে দেখা গেল আসলে প্যান্টেই বেশি লাভ হচ্ছিল।

হিসাব রাখলে কীভাবে রক্ষা পাওয়া যেত:

প্রোডাক্ট-ওয়াইজ বিক্রির হিসাব রাখলে বুঝতে পারতেন কোন পণ্য সবচেয়ে লাভজনক। তাতে বিনিয়োগের দিক বদলানো যেত।

 

. বিনিয়োগ বা ঋণ না পাওয়ার ঝুঁকি

বিপদ:

আপনি যদি ব্যাংক বা কোনো বিনিয়োগকারীর কাছে ঋণ এর জন্যে আবেদন করেন  এবং বলতে না পারেন আপনার ব্যবসা কত আয় করছে, তারা ঋণ বা বিনিয়োগ দেবে না।

উদাহরণ:

একজন উদ্যোক্তা তার ব্যাবসায়ের একটা ব্রাঞ্চ বা শাখা খুলতে ঋণ চায়, কিন্তু ব্যাংক চায় বিগত ১ বছরের বিক্রি ও খরচের হিসাব। তিনি কিছুই দেখাতে পারলেন না।

হিসাব রাখলে কীভাবে রক্ষা পাওয়া যেত:

হিসাবপত্র থাকলে সহজেই ব্যাংকে প্রমাণ করা যেত ব্যবসা লাভজনক এবং ঋণ শোধ করার সক্ষমতা আছে।

 

. ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি

বিপদ:

অনিয়মিত হিসাব ও খরচের কারণে ব্যবসার আয় কমতে থাকে, কিন্তু আপনি সেটা ধরতে পারেন না। একসময় পুঁজি শেষ হয়ে যায়।

উদাহরণ:

ছোট একটি কফি শপ দিনে দিনে কম আয় করছে, কিন্তু মালিক হিসাব না রাখায় বুঝতে পারছে না। একসময় দোকান চালানোর খরচই ওঠে না।

হিসাব রাখলে কীভাবে রক্ষা পাওয়া যেত:

প্রতিদিনের বিক্রির হিসাব রাখলে আগেই বোঝা যেত বিক্রি কমছে। সময়মতো পদক্ষেপ নেওয়া গেলে ব্যবসা বাঁচানো যেত।

 

0 replies

Leave a Reply

Want to join the discussion?
Feel free to contribute!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *