রেশিও এনালাইসিসঃ
উদ্যোক্তা হিসেবে আমার লক্ষ্য মাসের শেষে ব্যাবসায় যাতে লাভে থাকে সেটা নিশ্চিত করা। এতে নিশ্চয়ই কারো কোন সন্দেহ নেই। এখন সেটা বুঝার বেস্ট উপায় কি? উপায় হল ইনকাম স্টেটমেন্ট কি বলে সেটা দেখা। ইনকাম স্টেটমেন্ট দেখলে বুঝা যাচ্ছে ব্যাবসাটা গ্রস প্রফিট করতে পারলেও নেট প্রফিট করতে পারেনি। গ্রস প্রফিট হল সেলস থেকে কস্ট অফ গুডস সোল্ড বাদ দিলে যে প্রফিটটা পাওয়া যায় সেটা। আরো সোজা করে বললে মাল বানিয়ে লাভ করেছি কিনা এটার উত্তর দেয় গ্রস প্রফিট। এই বিজনেসটি ৩ ২৫০০০ টাকা বিক্রি করতে মালামাল কিনতে ও বানাতে ব্যয় করেছে ১৬৪০০০ টাকা। সে হিসেবে ব্যাবসায়টি কিন্তু ১৬০০০০ টাকার মত প্রফিট করতে পেরেছে। অর্থাৎ মাল বানিয়ে লাভ করতে পেরেছে ১৬০০০০ টাকা। কিন্তু মুশকিল হল শেষ পর্যন্ত এই লাভটা আর ধরে রাখতে পারেনি। কেননা ইনকাম স্টেটমেন্ট বলছে এই ব্যাবসাটির নীট লস হয়েছে ১৪০০০০ টাকার মত। তার মানে গ্রস প্রফিট ১৬৪০০০ টাকা আসার পরেও এটা অন্যান্য পরিচলন ব্যায় করেছে ৩০৩৩৮৮ টাকা। এই খরচের কারণে ১৬৪০০০ টাকা তো শেষ হয়েছেই পাশাপাশি লস হয়েছে উলটো আরো ১৪০০০০ টাকা। আসুন এবার তবে এই লাভ লসের ব্যাবচ্ছেদ করি এবং এখান থেকে কি কি বিজনেস ডিসিশন নেয়া যায় সেটা আলাপ করি।
১. গ্রস প্রফিট হয়েছে কেন? কেননা সেলস থেকে মাল বানানোর খরচ ছিল মাত্র ৫০%। সে কারনেই কিন্তু গ্রস প্রফিট দেখাচ্ছে ৫০%। এ থেকে বুঝতে পারা যায় যে, আমার মাল কেনাকাটা কম দামে হয়েছে , মাল নষ্ট কম হয়েছে এবং মাল ফেরত এসেছে কম। আরো বুঝা যায় যে আমাদের কেনাকাটার সিস্টেম ভাল হয়তো একসাথে কেনাকাটা ক্রয়ার কারনে ডিস্কাউন্ট নেয়া গেছে , মাল বানানোর সিস্টেম ভাল ছিল বলেই হয়তো খুব একটা নষ্ট হয়নি। আবার ওদিলে সেলস টিম দক্ষতার সাথে সেলস ডিল ক্লোজ করেছে দেখে হয়তো রিটার্ন আসেনি। আবার অর্ডার ম্যানেজমেন্ট খুব ভালোভাবে হয়েছে বলেও এটা হতে পারে। তার মানে এই কোম্পানির মাল বানানো এবং সেলস ম্যানেজমেন্ট টিম বেশ দক্ষতার সাথে তাদের দায়িত্ব পালন করেছে। সিদ্ধান্তঃ সেলস সিস্টেম এখন যেভাবে কাজ করছে এভাবেই কাজ করবে, কেনাকাটা যে সিস্টেমে হচ্ছেস এভাবেই হবে এবং প্রোডাকশন যেভাবে হচ্ছে সেভাবেই হতে পারে।
২. এবার আসি নীট লস কেন হল সে প্রসংগে। গ্রস প্রফিট হওয়া সত্বেও নীট লস হয়েছে অন্যান্য পরিচলন ব্যয় গ্রস প্রফিট কে ছাড়িয়েও ১৪০০০০ টাকা বেশি হয়েছে। এখন দেখি কোন কোন খাতে পরিচল্কন ব্যয় বেশি হচ্ছে। রেশিও বলছে মোট পরিচলন ব্যয় হয়েছে ৩০৩০০০ টাকার মত যার মধ্যে কেবল স্যালারি খাতেই ব্যয় হয়েছে ১৪৯০০০ টাকা! যা মোট পরিচলন ব্যয় এর ৪৯ শতাংশ। এছাড়া লোন এন্টারেস্ট ও ইউটিলিটি খাতে খরচ হচ্ছে যথাক্রমে ১২ ও ২০%। তার মানে এরাও ৩২% এর মত খরচ করে ফেলছে মোট পরিচলন ব্যয় এর। এখন দেখা যাক এখান থেকে কিছু কাটছাট করার উপায় আছে কিনা। স্যালারিতে যাদের দেখা যাচ্ছে এদের মধেয় এবশিরভাগ ই ফ্যাক্টরি সংক্রান্ত। শেষে কিছু আছে সেলস সংক্রান্ত। সিদ্ধান্তঃ সেলস যেহেতু ভাল করছে এখানে হাত দেয়াটা অনুচিত হবে। বাকি রইল ফ্যাক্টরির স্যালারি। এখান থেকে আমাদের খুঁজে দেখতে হবে এমন কেউ আছে কিনা যে না থাকলেও অপারেশন এগিয়ে নিতে খুব একটা ঝামেলা হবে না। পাশাপাশিএ টাও মনে রাখা জরুরি যে প্রোডাকশন কিন্তু খুব ভাল পারফর্ম্যান্স করেছে বলেই কোম্পানিটি গ্রস প্রফিট করতে পেরেছে। কাজেই এখানেও বাদ দিতে হবে ভেবে চিনতে যাতে প্রোদাকশন সাইকেল নষ্ট না হয়। এবার নজর দেয়া যাক ইউটিলিটি ও লোনে। ইউটিলিটিতে যে খাতগুলো দেখা যাচ্ছে ( ছবিতে দেখা যাচ্ছে) সেগুলো কিন্তু খুবই দরকারি কাজেই মনে হয় না বাদ দেবার সুযোগ থাকবে। লোন যেহেতু লিগাল দায়বদ্ধয়া সেহেতু লোনেও হাত দেবার কোন সুযোগ নেই। সিদ্ধান্তঃ ইউটিলিটি ও লোন যেমন আছে তেমনই রাখ্রতে হবে। কমানোর সুযোগ নেই।
৩. সবই তো হল কিন্তু এই মাসের যে নিট লস হল সেটা থেকে বের হবার তরিকা কি? তরিকা আছে। একটু মনোযোগ দিয়ে দেখলেই বুঝা যাবে এখানেই তরিকা লুকিয়ে আছে। আমরা যদি কোনভাবে গ্রস প্রফিট যা আসে তার থেকে কম খরচে পরিচলন ব্যয় মিটিয়ে ফেলতে পারি তবেই তো গ্রস প্রফিটের একটা অংশ থেকে যাবে নীট প্রফিট হিসাবে। তাইনা? ঠিক তাই। তাহলে যেতা করতে হবে সেটা হল পরিচলন ব্যয় এর দিকে তাকাতে হবে এবং দেখতে হবে এখান থেকে কোন ব্যয় কমানর আদৌ কোন সুযোহ আছে কিনা। মোটামুটি নিশ্চিত যে এই মোম্পানি খুব একটা পরিচলন ব্যয় কমাতে পারবে না যেটা কারন্সহ উপরে ব্যাখ্যা করেছি। তবে কি করনীয়? একতাই জিনিস করনীয় আছে। সেটা হল গ্রস প্রফিট এতটাই বাড়ানো যাতে পরিচলন ব্যয় একে ছাপিয়ে যেতে না পারে। লক্ষনীয় ব্যাপার হল কোম্পানিটি যদি ৩২০০০০ টাকা গ্রস প্রফিট করতে পারত তবে কিন্তু ১৭০০০ টাকা নিট প্রফিট হত তাইনা? আমাদের তাহলে এই গ্রস প্রফিট বাড়ানর তরিকাতেই সমাধান খুঁজতে হবে। গ্রস প্রফিটের সাথে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত দুটো বিষয় সেলস ও সিওজিএস নিয়ে কাজ করতে হবে। তার মানে সেলস যদি আরো বারানো যায় এবং সিওজিএস যদি আরো কমানো যায় তবেই গ্রস প্রফিট বাড়বে ও শেষ পর্যন্ত নিট প্রফিট অর্জন করা যাবে। সিদ্ধান্তঃ সেলস বাড়ানোর জন্য আরো ডিস্কাউন্ট দেয়া যেতে পারে কেননা যে ডিস্কাউন্ট দেয়া হয়েছে তা সেলস এর ১% এরও কম। মার্কেটিং এর জন্যে আরো কিছুটা ঘোরাঘুরি বাড়ানো যেতে আপ্রে কেননা কনভেন্স মোট সেলস এর ১৫ এরও কম। সিওজিএস কমানর জন্য আমরা আরো ডিস্কাউন্ট দেয় এমন শপ থেকে মালামাল কেনা যেতে পারে এবং পারলে কিছু প্রোডাকশন এর লোকজন বাদ দেয়া যেতে পারে।