সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে কিভাবে ইনকাম স্টেট্মেন্ট ব্যবহার করবেন?
১. সঠিক সেলস কৌশল নির্ধারন করতে
দেখুন এই কোম্পানিটি গত এক বছরে প্রায় ৩৪ লাখ টাকা সেলস করেছে। এখন এর ভেতরে প্রবেশ করলে ( নোট- ১ ব্যবহার করে) য়ামরা দেখব এটা মূলত একটা মৌসুমি ব্যবসা যার বেশিরভাগ সেলস আসে বছরের ৪ মাস অক্টোবর, নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারী মাসে। তাহলে এমন কোন স্ট্রেটেজি আনতে হবে যাতে বছরের বাকি ৮ মাসেও বিক্রি বাড়ানো যায়। হতে পারে কোন অফার দেয়া যেতে পারে বা কিছু ফ্রি সার্ভিস অফার করা যেতে পারে। আবার দেখুন কমিশন রেট ২৫ পারসেন্ট এর বেশি পেলে কিন্তু সেলস বাড়বে। কিভাবে তাহলে এটাকে ৩০ বা আরো বেশি করা যায় সেটা ভাবতে হবে। হতে পারে যেসব কোম্পানির সাথে কাজ করা হচ্ছে তাঁদের বাইরে যারা আছে তারা ৩০% পর্যন্ত কমিশন দেবে। আপনাকে সেটা খুঁজে বের করতে সাহায্য করবে এই ইনকাম স্টেট্মেন্ট এর এসব ডাটা।
২. খরচ কমানোর জায়গা খুঁজে পেতেঃ
রেশিও খেয়াল করলে দেখবেন গ্রস প্রফিট মার্জিন আপনার ৫৪%। এর মানে কি? এর মানে হল ১০০ টাকা বিক্রি করে সেলস এর অন্যান্য খরচ বাদ দিয়ে আপনি ৫৪ টালা লাভ করেছেন। খেয়াল করে দেখেন এটা কিন্তু সি ও জি এস এর ওপর নির্ভর করছে সেলস এর পাশাপাশি। সি ও জি এস প্রায় ১৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। এটা যদি কমিয়ে ১২ লাখ বা ১০ লাখে আনতে পারা যেত তাহলে কিন্তু গ্রস প্রফিট ১৮ লাখের যায়গায় হয়ত ২০ লাখ থেকে ২৫ লাখ পর্যন্ত হতে পারত। তাইনা? একই সাথে বাড়ত গ্রস প্রফিট মার্জিন। তাহলে সেলস বাড়ার পাশপাশি দেখতে হবে কস্ট অফ গুডস সোল্ড কোনভাবে কমানো যায় কিনা। নোট-২ এ গিয়ে দেখা গেল প্ল্যাটফর্মগুলোকে সেলস এর ওপর ১২% কমিশন দিতে হচ্ছে। যদি এই কমিশন আরো কমিয়ে ১০ বা ৮% করা যায় তাহলে কিন্তু সি ও জি এসও কমে আসে। তাহলে দেখা লাগবে কিভাবে এটাকে কমিয়ে আনা যায়। এভাবে ইনকাম স্টেট্মেন্ট আপনাকে কিন্তু সি ও জি এস কমানোর ব্যাপারটা হাতে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।
৩. পরিচালনা ব্যয় কমানোর খাত খুঁজে পেতেঃ
দেখুন নেট প্রফিট মার্জিন মাত্র ২০%। এর মানে হল ১০০ টাকা সেলস করে কোম্পানিটি গ্রস প্রফিট পেয়েছিল ৫৪ টাকা। কিন্তু সেটা তারা ধরে রাখতে পারেনি শেষ পর্যন্ত। কেননা আরো ৩৪ টাকা তাঁদের ব্যবসায়ের আনুষঙ্গিক ব্যয় নির্বাহ করতে খরচ করে ফেলতে হয়েছে। এটাকে কমিয়ে যদি ২০ এ নিয়ে আসাযেত হবেই কিন্তু ৩৪ টাকা নীট প্রফিট হিসেবে পাওয়া যেত। মোট কথা পরিচালনা ব্যয় যত কমবে তত ভাল। যদি নটগুলো দেখেন তবে দেখবেন এক স্যালারিতেই মোট খরচের ৭৬ শতাংশ ব্যবহৃত হচ্ছে! আর অফিস রেন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ১০ শতাংশ। তাহলে মোট ৮৬ শতাংশ টাকা চলে যাচ্ছে এই দুই খাতে। এখন মুশকিল হল এই খাতগুলো এমন খাত যেগুলো বাদ দেয়াটা বা কেটে ছোট করা কিন্তু ক্ষেত্র বিশেষে কঠিন। যদি দেখা যায় এখানে এমন লোকজন আছেন যাদের বাদ দেয়া সম্ভব না তাদের স্যালারি কমানো যায় কিনা দেখতে হবে। আবার রেন্ট বা ভাড়া যদি বেশি হয় তাহলে কম ভাড়ার কোন অফিসে যাওয়া যায় কিনা দেখা যেতে পারে। আর যদি কোনভাবেই খরচ কমানো না যায় তবে কিভাবে গ্রস প্রফিট বাড়ানো যায় সেদিকেই আরো ফোকাস করতে হবে। আর আগেই বলেছি সেলস বাড়ানো ও সি ও জি এস কমানোই হল গ্রস প্রফিট বাড়ানোর একমাত্র উপায়।
৪. চুরি বা প্রতারণা খুঁজে পেতেঃ
ইনকাম সেট্মেন্ট এর পরিচালনা ব্যায়গুলো যদি আপনি মিলিয়ে দেখেন তবে খেয়াল করবেন কোন কোন মাসে আপনার কিছু খাতে অস্বাভাবিক বেশি। হয়তো ঘাটালে দেখা যাবে কোন কর্মচারী হয়তবা সিস্টেমের সুযোগ নিয়ে বেশি খরচ করে ফেলেছে যেখানে তার আরো কম খরচ করলেই হত। কেনাকাটাগুলোর ভাউচার যদি খেয়াল করেন দেখবেন হয়তো যে দাম দিয়ে কেনা হয়েছে আসলে সেগুলোর দাম আরো কম। বেশি টাকার ভাউচার করিয়ে অসাধু কোন কর্মচারী হাতিয়ে নিচ্ছে কোম্পানির টাকা। একজন দক্ষ্য একাউন্টেন্ট এগুলো এনালাইসিস করে কোম্পানির সিস্টেম ভাল রাখতে সব সময় তৎপর থাকেন। আপনি নিজেও এভাবে অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়ানো অনেক কর্মচারী ধরতে পারবেন। এদের শাস্তির আওতায় আনলে যেমন কালচার ভাল হবে তেমনি বাচবে টাকা, বাড়বে প্রফিট।
৫. খারাপ পার্ফর্ম্যান্স ও ভাল পার্ফর্ম্যান্স করা ডিপার্ট্মেন্ট ও লোকজন খুঁজে পেতেঃ
আপনি ইনকাম স্টেটমেন্ট এনালাইসিস করে, নানা রকম হিসাব মিলিয়ে দেখবেন যে কিছু কিছু ডিপার্ট্মেন্ট বা কর্মচারী ভাল করেছে এবং কিছু কিছু ডিপার্ট্মেন্ট বা কর্মচারী সেভাবে ভাল করেনি বা প্রত্যাশার চেয়ে খারাপ করেছে। যেমন যদি দেখেন সেলস গত বছ্রের তুলনায় এবার ভাল তাহলে বোঝা যায় সেলস টিম ভাল করেছে , যদি দেখা যায় গত মাসের চেয়ে এ মাসের কনভেন্স বা মোবাইল বিল বেড়েছে তবে বুঝতে হবে সম্ভাবনা আছে কিছু ক্ষেত্রে ব্যাক্তিগত বিলকে কোম্পানির ঘাড়ে দেয়া হয়ে থাকতে পারে, যদি দেখেন গত মাসের রিপেয়ার বা মেরামত ব্যয় এ মাসের চেয়ে কম ছিল তার মানে বুঝতে হবে এমাসে কর্মচারীরা যথাযথ যত্ন নিয়ে জিনিসপত্র হয়তো ব্যবহার করেনি বিধায় এমাসের এ খাতে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। এভাবে ইনকাম স্তেট্মেন্ট আমাদের পারফর্ম্যান্স মূল্যায়ন করবার সুযোগ করে দেয়। ফলে আমরা বুঝতে পারি কোন কোন ডিপার্ট্মেন্টের পারফর্ম্যান্স ভাল করতে হবে এবং সেটা কিভাবে করা যেতে পারে সেটাও আমরা বের করতে পারি। পরিনামে আমাদের খরচ কমে এবং কোম্পানির গ্রোথ বাড়ে।